হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, চলমান সংঘাতের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ন্যাটোর দিকেই ইঙ্গিত করেছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান জানান, ন্যাটো স্নায়ুযুদ্ধের পণ্য হিসাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিলুপ্ত হওয়া উচিত ছিল। তিনি ইউক্রেন সংঘাতের সূচনাকারী এবং সবচেয়ে বড় পরিকল্পনাকারী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছেন। (ব্রেক্সিট)
আমরা বিভিন্ন লেখায় গত দু তিন বছর ধরে বিশেষ করে ২০২০ সালে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সময় থেকে বলে আসছি যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ার্শো জোটের বিলুপ্তির সাথে সাথে সেই বিংশ শতাব্দীর ৯০এর দশকেই ন্যাটোর বিলুপ্তি বাঞ্ছনীয় ও উচিত ছিল। কারণ ন্যাটো গঠিতই হয়েছিল সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন ওয়ার্শো জোট গঠনের মোকাবেলায় । তাই সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ার্শো জোটের বিলুপ্তি হলে ন্যাটোর অস্তিত্ব বহাল থাকার দর্শন ও কারণ আর বিদ্যমান থাকে না । তাই ওয়ার্শো জোটের বিপক্ষ হিসেবে ন্যাটোর বহাল থাকাই অনুচিত। কিন্তু সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন অতি ধূর্তামি ও চালাকির সাথে রাশিয়াকে প্রয়াত ও বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ার্শো জোটের স্থলাভিষিক্ত ও ন্যাটোর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে ন্যাটোকে শুধু বিলুপ্তির হাত থেকেই রক্ষা করে নি বরং ন্যাটোর আরো সম্প্রসারণ ঘটিয়ে প্রাক্তন বিলুপ্ত ওয়ার্শো জোটের বহু দেশকে ন্যাটো জোট ভুক্ত করে পূর্ব বা প্রাচ্য মুখী সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখে রাশিয়ার দোর গোড়ায় নিয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন । ব্রিটেন ব্রেক্সিট করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করেছে ঠিকই কিন্তু ন্যাটো জোট থেকে বের হয় নি । আর ন্যাটো তো সবসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের মধ্যেই রয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ন্যাটোর মাধ্যমে পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ , কর্তৃত্ব ও আধিপত্য বহাল রাখতে পারছে । কারণ প্রায় গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ই এখন ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত । ন্যাটো না থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর কর্তৃত্ব আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারত না বা প্রতিষ্ঠা করা হয় খুব কঠিন হত নতুবা উপযুক্ত যৌক্তিক কারণ খুঁজে পেত না ! কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ন্যাটোর খোয়াড়ে পুরে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক অনেক সহজ । আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর বিস্তৃতি ঘটিয়ে , ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ( আসলে ইউরোপ ) আরো দুর্বল করে এবং ন্যাটোর উত্তরোত্তর সম্প্রসারণ ও বিস্তৃতি ঘটিয়ে রাশিয়াকে ঘিরে ফেলে রাশিয়ার ভবিষ্যত নিরাপত্তা , স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডত্ব নস্যাত করার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি করে গোটা ইউরোপকে ভবিষ্যতে বশংবদ তাবেদার গোলাম ( আজ্ঞাবহ দাস ) বানানো বহু সহজ হবে । ইউক্রেইন সংকট আসলে সেই লক্ষ্যে সৃষ্টি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ন্যাটো জোটকে ব্যবহার করে ।
আসলে ওয়ার্শো জোটের বিলুপ্তির সাথে সাথে ন্যাটো জোটের বিলুপ্তি সংক্রান্ত রাশিয়া ও চীনের মতো দেশসমূহের সোচ্চার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল সেই বিংশ শতকের ৯০ এর দশক থেকেই ।
" ন্যাটো স্নায়ু যুদ্ধ যুগের পণ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ওয়ার্শো জোটের বিলুপ্তির সাথে
সাথে বিলুপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল । "
---- এ কথা
চীন ও চীনের মতো দেশ যতই বলুক না কেন এখন তা ইউরোপীয়দের কর্ণকূহুরে ঢুকবে না বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ইউরোপীয় দের উল্টো বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে ন্যাটো জোটের অস্তিত্ব ইউরোপের অস্তিত্ব ও স্বার্থের জন্যও অত্যন্ত জরুরী এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়ন না থাকলেও ন্যাটোর অস্তিত্ব ইউরোপের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরী!! আর ন্যাটো না থাকলে রাশিয়া ও চীন ইউরোপকে গিলে খাবে ও গ্রাস করবে যার প্রমাণ ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন ও যুদ্ধ ! তাই ইউরোপের উচিত এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কোরবানি করে হলেও ন্যাটোকে টিকিয়ে রাখা !!! এমন কুমন্ত্র ও যাদু মন্ত্রই পাঠ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ইউরোপের ( ইউরোপীয়দের ) কানে ।
মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
১৫ রমযান , ১৪৪৩ হি . ৩রা বৈশাখ ১৪২৯